নীলফামারী একটি প্রাচীন জনপথ। খ্রীঃ পুর্ব নবম শতকে খননকৃত বিরাট রাজার দিঘী অপভ্রংশে বিন্যাদিঘী নীলফামারীর প্রাচীণ ইতিহাসের কথা স্বরন করিয়ে দেয়। এছাড়া ও বিলুপ্ত প্রায় ধর্মপালেরগড়, হরিশ চন্দ্রের পাঠ, ভীমের মায়ের চুলা, ময়নামতির দূর্গ জেলার ঐতিহাসিক নিদর্শনসহ কৃষক বিদ্রোহ, নীল বিদ্রোহ,তেভাগার আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ নীলফামারীর ইতিহাসের অন্যতম অধ্যায়। বর্তমান শহরের উপ-কেন্দ্র দিয়ে সর্বমঙ্গলা নদীর তীরে শাখামাছা নামক দুটি বন্দর ছিল, এ বন্দর পথেই নীল করদের মালামাল রপ্তানী করা হত। ১৮০০ শতকে প্রথমার্ধে কার্জির হাট সহ অত্র অঞ্চলের বৃহত্তম জমিদারী প্রথা ভেঙ্গে নতুন নতুন জমিদার সৃষ্টি হয়। ১৮০১ খ্রিষ্টাব্দের ১০ এপ্রিল ১৩ জন জমিদার স্বাক্ষরিত অভিযোগ নামায় দেখা যায় মিঃ বি- মার্স চিনির কুঠি ও দুরা কুটি, মিঃ বাফটন ডিমলায়, মিঃ আর ব্রাউড কিশোরগঞ্জ ও মিঃ ডবিডউ টেরানিক্স টেংগনমারীতে নীল ফ্যক্টরী স্থাপন করেছিলেন। পরবর্তীতে এই অঞ্চলে ইংরেজ বেনিয়াদের বহু সংখ্যক নীল কুঠি ও নীল খামার গড়ে উঠেছিল। ইংরেজি FIRME এর বাংলা অর্থ খামার, এই নীল ফার্ম তথা নীলখামারী থেকে কালক্রমে নীলফামারী নামের উৎপত্তি হয়। বর্তমান নীলফামারী শহরের ৩ কিলোমিটার উত্তরে পুরাতন রেল ষ্টেশনের অদুরে একটি বড় নীল খামার ছিল, যার ধংশাবশেষ আজও বিদ্যামান। ১৮৪৭-৪৮ খ্রিষ্টাদ্বে নীলচাষ অলাভ জনক হওয়ায় কৃষকেরা নীল চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেললে, নীলচাষ করানোর জন্য নীলকরেরা নীলচাষীদের উপর বিভিন্ন ধরনের অত্যাচারের ষ্ট্রীম রোলার চালায়। যার নৈপত্থ্য চিত্র দিনবন্ধু মিত্রের ‘‘ নীল দর্পন’’ নাটকে দেখা যায়। ১৮৫৯-৬০ সালে কৃষকদের ব্যাপক বিদ্রোহের ফলে অত্র অঞ্চলে নীলচাষ বন্ধ হয়ে যায়। কিমত্ম কালের চাকায় নীল খামার- নীলফামারী নামের স্বার্থকতা লাভ করে।
বিটিশ সরকার ১৭৯৩ খ্রিঃ ২২ নং রেজুলেশন দ্বারা রংপুর জেলায় ২২ টি থানায় সৃষ্টি করলে ডিমলা, দারোয়ানী, বারোয়ানী ও বাগদুয়ার প্রথম এই চারটি থানা সৃষ্টি হয়। ১৮০৯ খ্রিঃ ডাঃ বুকানন হ্যামিলটনের সার্ভে অনুযায়ী দারোয়ানী থানা বর্তমান নীলফামারী ও সৈয়দপুরের কিয়দংশ নিয়ে ২২৮ বর্গমাইল জুড়ে গঠিত ছিল। পরবর্তীতে ১৮৭৫ খ্রিঃ ১৮ মে বর্তমান ডোমার উপজেলার বাগডোগরায় নীলফামারী মহকুমার প্রথম কার্যক্রম শুরম্ন হয়। ১৯০১ সালের পুর্বে নীলফামারী মহকুমাকে তিনটি থানায় বিভক্ত করা হয় এবং ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে ছয়টি থানা, যথা নীলফামারী সদর, সৈয়দপুর, ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা ও কিশোর গঞ্জ থানায় বিভক্ত করা হয়। কালের পরিক্রমায় ১৯৮৪ সালে নীলফামারী মহকুমা জেলায় রূপামত্মরিত হয়।
বর্তমান নীলফামারী জেলা কর্কট ত্রামিত্ম রেখার সামান্য উপরে অবস্থিত। এই জেলার উত্তরে ভারতের জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলা দক্ষিণ ও পুর্বে রংপুর জেলা পশ্চিমে দিনাজপুর ও পঞ্চগড় জেলা। নীলফামারী জেলা ২৫.৪৪ ডিগ্রী উত্তর থেকে ২৬.১৯ ডিগ্রী উত্তর ও ৮৮.৪৬ ডিগ্রী থোকে ৮৯.১২ ডিগ্রী পুর্বে অবস্থিত। বর্তমানে জেলার আয়তন ১৮২১.৭০ বর্গকিলোমিটার। মিউনিসিপ্যাল এডমিনিঃ অডিনেন্স জারী করা হয়। ফলে ১৯৬৪ সালের ১লা সেপ্টেম্বর নীলফামারী ইউনিয়ন পরিষদ নীলফামারী টাউন কমিটিতে রূপামিত্মরিত হয়। স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ সালে ২০ জানুযারী টাউন কমিটি নীলফামারী পৌরসভায় পরিনত হয়। ৩য় শ্রেণী, ২য় শ্রেণী হয়ে অবশেষে ২০০৮ সালে পৌরসভা ১ম শ্রেণীতে মর্যদা লাভ করে।
৪২,৭০ বর্গ কিলোমিটার ( ২৭.৫০ পুর্বের এবং ১৫.২০ বর্গকিলোমিটার প্রক্রিয়ধীন ) আয়তনের এই পৌরসভার উত্তরে টুপামারী ইউনিয়ন দক্ষিনে কুন্দপুকুর ও ইটাখোলা ইউনিয়ন পুর্বে পুর্বে ইটাখোলা ইউনিয়ন এবং পশ্চিমে কুন্দুপুকুর ইউনিয়ন। বার্ষিক গড় সবোচ্চ তাপ মাত্রা ৩২.৯ ডিগ্রী সেঃ এবং সর্বো নিম্ন ৮ ডিগ্রী সেঃ, বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১৯৭৩ মিমি। সমতল ভহমি। এই পৌরসভা অত্যামত্ম সামত্ম মনোরম ও বসবাসের উপযোগী।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস