নীলফামারীর কৃতি সন্তান ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
z আসাদুজ্জামান নুর :
বিশিষ্ট নাট্য অভিনেতা ও রাজনীতিবিদ আসাদুজ্জামান নুর ১৯৪৭ সালে জলপাইগুড়িতে জন্মগ্রহন করেন। দেশ বিভাগের পর তাঁরা সপরিবারে নীলফামারী জেলাশহরে বসবাস শুরু করেন। তাঁর মা বেগম আমিনা বেগম নীলফামারী সরকারী বালিকা বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক হিসেবে অবসরে যান। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও মঞ্চে বহুসংখ্যক নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে সুনাম অর্জন করেছেন। ২০০১ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি নীলফামারী -২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
z শাহ কলন্দর :
পীর ও কামেল শাহ কলন্দর (রা:) এর আধ্যাত্মিক শক্তি ও ইসলামের মহান আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এ অঞ্চলের বহু লোক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। তাঁর জন্ম ও মৃত্যুর সঠিক তারিখ জানা যায়নি। উত্তরাঞ্চলের প্রথম পর্যায়ের ইসলাম প্রচারকদের মধ্যে তিনি উল্লেখযোগ্য। নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলায় হযরত শাহ কলন্দর (রা:) এর মাজার অবস্থিত।
নবাব নুরুল উদ্দীন :
কৃষক বিদ্রোহের মহান নেতা নবাব নুরুল উদ্দীন ইংরেজ বেনিয়াদের নিষ্ঠুর শাসন ও তাদের দোসর দেবী সিংহ ও অন্যান্য জমিদারদের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলেন। তাঁর নেতৃত্বে তৎকালীন কার্যির হাট পরগণা থেকে ক্রমান্বয়ে সমস্ত ভারতীয় উপমহাদেশে কৃষক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।
খয়রাত হোসেন :
১৯০৯ সালে ১৪ নভেম্বর নীলফামারী জেলার সোনারায় ইউনিয়নের বেড়াকুঠি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩০ সনে তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজের প্রথম মুসলিম ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৪৪ সালে নীলফামারী অঞ্চল থেকে এম এল এ নির্বাচিত হন। ১৯৫৫ সালে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রী পরিষদের খাদ্য, মৎস ও পশুপালন মন্ত্রী হিসেবে আড়াই বছর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে তিনি দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং ১৯৭২ সালে ইন্তেকাল করেন। নীলফামারী জেলায় খয়রাত হোসেন মার্কেট, খয়রাত হোসেন সড়ক ও খয়রাত নগর তাঁর স্মৃতি বহন করছে।
দবির উদ্দিন আহমেদ :
তিনি বাংলা ১৩০৯ সালে নীলফামারীর ভোগডাবুড়ী এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে কারাবরণ কারেন এবং ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি দীর্ঘদিন নীলফামারী জেলার আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
মশিউর রহমান যাদু মিয়া :
১৯২৪ সালে নীলফামারী জেলার ডিমলার খগাবাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতা ইসলামী কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। তিনি ১৯৫৭ সালে পাকিস্তান ন্যশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন এবং ১৯৫৪ সালে রংপুর জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যন নিযুক্ত হন। ১৯৬২ ও ১৯৬৫ সালে পর পর দুবার পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৮ সালে তিনি বংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগ দেন এবং বাংলাদেশ সরকারের সিনিয়র মন্ত্রী ও রেল বিভাগের দায়িত্ব লাভ করেন। ১৯৭৯ সালে মন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন।
ডাঃ জিকরুল হক :
তিনি ষাটের দশকে সৈয়দপুরের রাজনীতিতে অগ্রনী ভুমিকা পালন করেন। সেসময় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন ও আও?য়ামী লীগে যোগ দেন। তিনি সৈয়দপুর পৌরসভার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। ১৯৭১ সালে পাক সেনা বাহিনী কর্তৃক বন্দী হন এবং পাক সেনারা তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। তাঁর স্মরণে সৈয়দপুরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
বেগম লুৎফুন্নেছা আববাস :
তিনি নীলফামারী জেলার ডোমারে ১৯১২ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ভাওয়াইয়া সঙ্গীত সম্রাট মরহুম আববাস উদ্দিনের সহধর্মীনি। সাহিত্যাঙ্গনে তাঁর পদচারণা লক্ষনীয়। তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে কিছু ফুল কিছু স্মৃতি, কময় কথা বলে, শেষ বিকেলের রোদ উল্লেখযোগ্য।
হরলাল রায় :
তিনি ১৯২৩ সালে নীলফামারীর সূবর্ণ খুলি গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তিনি টিভি ও বেতারে সঙ্গীত পরিবেশন ছাড়াও বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ভাওয়াইয়া সঙ্গীতে তার অবদান উল্লেখযোগ্য।
মহেশ চন্দ্র রায় :
তিনি ১৯২৫ সালে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে জন্মগ্রহন করেন। তিনি গীতিকার, সুরকার ও কণ্ঠ শিল্পী হিসেবে পরিচিত। তিনি নিজে ৩৭৪০ টি গান রচনা করেছেন মর্মে জানা যায়। তাঁর রচিত গানে নীলফামারী অঞ্চলের মাটি মানুষ ও প্রাণের স্পন্দন পাওয়া যায়।
রথীন্দ্রনাথ রায় :
বিশিষ্ট পল্লীগীতি শিল্পী। বেতার, টেলিভিশন, মঞ্চ এবং সিনেমায় ভাওয়াইয়া গান পরিবেশন করে তিনি এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী সৃষ্টি ভাওয়াইয়া গানকে বিশেষ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেন। তার পিতা হরলাল রায় ছিলেন ভাওয়াইয়া গানের প্রথম সারির গীতিকার ও সুরকার এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস